বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৬ অপরাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
পুলিশ আপনার গাড়ি আটক করলে কি করবেন, কোথায় যাবেন, কিভাবে ঝামেলা থেকে মুক্ত হবেন, কিভাবে গাড়িকে নিজ জিম্মায় নিবেন তা নিয়েই শুনুন আজকের আলোচনা।
পুলিশ বিভিন্ন কারণে আপনার গাড়ি আটক করতে পারে, যেমন, লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে, নিষিদ্ধ হর্ণ ব্যবহার করলে, নির্ধারিত গতির চেয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালালে, বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালালে, সঠিক জায়গায় গাড়ি পার্ক না করলে, গাড়ি চলতে গিয়ে পুলিশের নির্দেশনা না মানা, গাড়ির ফিটনেস সংক্রান্ত কাগজপত্র নবায়ন না করা, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন না করা, গাড়ির ধোঁয়া বের হওয়া, অবীমাকৃত মোটর গাড়ি চালনা ইত্যাদি। গাড়ি আটক করার সময় পুলিশ একটি বা দু’টি কাগজ জব্দ করবে এবং আপনাকে একটি রশিদ দেবে। ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের চারটি জোন রয়েছে যথা- উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিম। পুলিশের দেয়া রশিদের পেছনেই লেখা থাকবে কোন জোনের ট্রাফিক পুলিশ আপনার গাড়িটি আটক করলো। আপনাকে সেই জোনের অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে। রশিদের পেছনে জোন ভিত্তিক উপস্থিতির সময়ও লেখা থাকে। কাজেই সে অনুয়ায়ী গেলে আপনার সময় বাঁচবে। তবে অন্তত চার-পাঁচদিন পরে যাওয়াই ভালো, কারণ কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট অফিসে পৌঁছাতে সাধারণত তিন-চারদিন সময় লাগে।
কোথায়, কি অপরাধে জরিমানা করা হল, কে জরিমানা করলেন, কত তারিখের মধ্যে হাজির হতে হবে সব কিছুই লিখে দেয়া হয় রশিদটিতে। সংশ্লিষ্ট জোনের ডেপুটি কমিশনার জরিমানা নির্ধারণের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি করে থাকেন। এসব ক্ষেত্রে আপনি আপনার অনুকূলে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরতে পারেন। ডেপুটি কমিশনার পূর্ণ জরিমানার চার ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত জরিমানা নির্ধারন করতে পারেন, এমনকি জরিমানা মওকুফও করে দিতে পারেন। তবে আপনার ড্রাইভারকে রশিদসহ পাঠিয়ে জরিমানা দিয়ে আসাটাই ভাল। জরিমানা দেবার জন্য ডেপুটি পুলিশ কমিশনার অফিস থেকে আরেকটি রশিদ দেয়া হবে আপনাকে। তবে জরিমানা না দিলে বা যথাসময়ে হাজির না হলে অপরাধের ধরন, ঘটনাস্থল ইত্যাদির প্রতিবেদন সহকারে মামলাটি আদালতে প্রেরণ করা হবে ওয়ারেন্ট ইস্যু করার জন্য। এসব ক্ষেত্রে জরিমানা নির্ধারনের পর আপনি যদি মনে করেন আপনার ওপর অন্যায় করা হয়েছে তবে আদালতেও যেতে পারেন। সামান্য জরিমানার জন্য আদালতে গিয়ে আর্থিক বিচারে আপনার কোন ফায়দা হবে না, তবে রায় আপনার অনুকূলে গেলে সেটি আপনার জন্য একটি নৈতিক বিজয় হবে। বলাহুল্য এত ঝামেলা করে কেউ সাধারণত জরিমানা চ্যালেঞ্জ করতে আদালতে যায় না।
পুলিশ যদি কোন কারণে গাড়ি আটক করে থানায় নিয়ে যায় এবং মামলা হয় তাহলে গাড়িটি নিজের জিম্মায় নিতে আপনি আবেদন করতে পারবেন। প্রথমে থানা থেকে মামলার এজাহারের ফটোকপি তুলুন। সেই সঙ্গে গাড়ির নিবন্ধনের ফটোকপি কিংবা গাড়ির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে একজন আইনজীবীর শরণাপন্ন হন। আইনজীবী মহোদয় আপনার আটককৃত গাড়িটি আপনার জিম্মায় নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আবেদন করবেন। শুনানীর প্রথম দিনে ম্যাজিষ্ট্রেট মহোদয় সাধারণত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে (আইও) বিআরটিএ (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) থেকে গাড়ির মালিকানা নিরূপণ করে কোনো অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না, তা যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আদেশ দেবেন। আদালতের আদেশ সাধারণত পরবর্তী কার্যদিবসে সংশ্লিষ্ট থানায় পৌঁছে যায়। জি. আর ও অফিসে যোগাযোগ করুণ। বিচারক মহোদয়ের আদেশ থানায় গেছে-কি-না, যেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন অতি সত্বর থানা থেকে আদালতে প্রেরণ করেন। প্রতিবেদন থানা থেকে আদালতে পাঠানো হলে আইনজীবী নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখবেন যে তা নথির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে কি-না। এরপর আইনজীবী একটি দরখাস্তের মাধ্যমে আদালতকে অবহিত করবেন যে বিআরটিএ থেকে গাড়ির মালিকানা নিরূপণ করা হয়েছে। শুনানির সময় আদালতের সামনে গাড়ির মালিককে উপস্থিত থাকতে হবে। আদালত বিআরটিএ প্রতিবেদন, তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন ও আইনজীবীর শুনানিতে সন্তুষ্ট হলে থানা কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেবেন আটক গাড়িটি জিম্মায় দেওয়ার জন্য। পরবর্তী সময়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে গাড়ি নিজের জিম্মায় নিতে পারবেন এই শর্তে যে পরবর্তী সময়ে মামলার তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন হলে তিনি তা থানায় হাজির করবেন। এভাবে গাড়িটি জিম্মায় নিতে প্রায় এক থেকে ছয় মাস সময় লাগতে পারে।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮